জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচনী রোডম্যাপ চায় বিএনপি
- আপলোড সময় : ০৭-১১-২০২৪ ০৮:৪২:১৮ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৭-১১-২০২৪ ০৮:৪২:১৮ পূর্বাহ্ন
সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
আগামী জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচনী রোডম্যাপ চায় বিএনপি। কয়েক মাস ধরেই দলটির পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে এই দাবি জানানো হচ্ছিল। অন্য বিরোধী দলগুলোও প্রায় একই দাবিতে বক্তব্য দিচ্ছে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে স্পষ্ট করে কোনো বক্তব্য আসেনি। বরং সরকারের দু-একজন উপদেষ্টার বক্তব্যে নির্বাচনী রোডম্যাপের বিষয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে রোডম্যাপ ইস্যুতে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত দেখবে বিএনপি।
এ সময়ের মধ্যে নির্বাচনী রোডম্যাপ নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু সরকারের পক্ষ থেকে জানানো না হলে, রাজপথে সোচ্চার হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। জানা গেছে, ওই সময়ের পর আগামী বছরের মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি তুলবে বিএনপি। গত সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এসব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি এই বৈঠকে যুক্ত ছিলেন। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির অন্য সদস্যরা অংশ নেন।
বৈঠকের একাধিক সূত্র জানায়, নির্বাচনী ইস্যুতে বিএনপির অবস্থান হচ্ছে, তারা এ সরকারকে সহযোগিতা করতে চায়। যাতে তারা অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করতে পারে। তবে দলটি এও মনে করে, সরকারের রাষ্ট্রকাঠামোর সংস্কার ও নির্বাচনী প্রস্তুতি একসঙ্গে চলতে পারে। এতে তাদের আপত্তি নেই, কারণ বিএনপিও প্রয়োজনীয় সংস্কার চায়। এজন্য দলটি সরকারের সংস্কার প্রস্তাবের সঙ্গে সহমতও পোষণ ও সরকারকে সহযোগিতা দিচ্ছে। সরকার ঘোষিত ১০টি কমিশনের পাশাপাশি বিএনপির পক্ষ থেকেও ছয়টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিএনপি এই কমিটিকে স্যাডো (ছায়া) কমিটি বলছে। এই কমিটিগুলো তাদের সুপারিশ তৈরি করে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে হস্তান্তর করবে। বিএনপি বলছে, সরকার যে সংস্কার করতে চাচ্ছে, এ বিষয়ে আগেই তাদের ঘোষিত রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা রূপরেখায় বলা আছে।
সূত্রগুলো বলছে, দেশের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত। তারা এখন ভোট দিতে চায়। তাই সরকারের উচিত, নির্বাচনমুখী প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। এজন্য বিএনপির পক্ষ থেকে সরকারকে নির্বাচন কমিশন (ইসি), প্রশাসন এবং বিচার বিভাগকে প্রাধান্য দিয়ে সংস্কার কার্যক্রম চালানোর জন্য বলা হয়েছিল। সংস্কার ও নির্বাচনী প্রস্তুতি একসঙ্গে চললে দেশবাসী মনে করবে সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা। কিন্তু সরকার সে পথে হাঁটছে বলে বিএনপি মনে করছে না। অন্তর্বর্তী সরকারের তিন মাস অতিক্রান্ত হলেও সরকার এখনো রোডম্যাপের বিষয়টি স্পষ্ট করতে পারেনি। নির্বাচন নিয়ে তাদের কী চিন্তা, সেটিও পরিষ্কার করেনি। তারা কত দিন ক্ষমতায় থাকতে চায়, কিংবা ক্ষমতা ও নির্বাচন দীর্ঘায়িত করতে চায় কি না এটা নিয়ে বিএনপি নেতাদের মধ্যে এক ধরনের শঙ্কা রয়েছে।
বৈঠকে নেতারা তাদের অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, সরকার সংস্কারের কথা বললেও নির্বাচন নিয়ে তাদের কোনো বক্তব্য নেই। তাই সরকারকে অবিলম্বে নির্বাচনী রোডম্যাপ ইস্যুতে অবস্থান স্পষ্ট করতে চাপে রাখা উচিত বলে নেতারা মনে করেন। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে রাজনীতিবিদরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য উসখুস করছেন অন্তর্বর্তী সরকারের এক উপদেষ্টার এমন বক্তব্যে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়।
গত সোমবার নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হাকোন অ্যারাল্ড গুলব্রান্ডসেনের সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম বলেন, প্রয়োজনীয় সব সংস্কার শেষে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দলটির নেতারা উপদেষ্টার এই বক্তব্যের ঘোরতর আপত্তি জানিয়েছেন। এ ছাড়া বৈঠকে উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদারকে নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দলটি তার পদত্যাগ চায়। কারণ, আলী ইমাম মজুমদারকে বিতর্কিত কর্মকর্তা মনে করেন তারা। সে কারণে তাকে সরকারে রেখে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলে অভিমত নেতাদের।
নির্বাচন প্রসঙ্গে গত মঙ্গলবার যশোর টাউন হল ময়দানে জেলা বিএনপি আয়োজিত সভায় তারেক রহমান বলেন, আমরা ৩১ দফা প্রস্তাবের মাধ্যমে দেশের মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে কাজ করে যাচ্ছি। দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রকাঠামোর কী কী সংস্কার করতে চায় এবং সেটা করতে কত দিন লাগবে, কোনো ছলচাতুরী ছাড়াই তা স্পষ্ট করে অবিলম্বে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করুন। সরকারকে বলব, জাতিকে ধোঁয়াশায় রাখবেন না। জাতিকে অন্ধকারে রেখে আপনারা যা খুশি তাই করবেন, জনগণ সেটা মেনে নেবে না।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের কর্মসূচি জোরালোভাবে পালনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা রূপরেখাকে সাধারণ মানুষের কাছে ব্যাপক আকারে তুলে ধরারও সিদ্ধান্ত হয়েছে। - দেশ রূপান্তর
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ